শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের টাকা যাচ্ছে কোথায়

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের টাকা যাচ্ছে কোথায়

স্বদেশ ডেস্ক:

ব্যাংকের শাখাবিহীন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিতে প্রযুক্তিনির্ভর এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে দ্রুত প্রসার ঘটেছে এ বিকল্প ব্যাংকিং সেবার। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিংকে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অর্থসংগ্রহের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করছে ব্যাংকগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা কর্পোরেট বা শিল্প খাতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গত মার্চ পর্যন্ত আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। অথচ ঋণ দেওয়া হয়েছে ৭ শতাংশেরও কম। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের টাকা যাচ্ছে কোথায়? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থসংগ্রহের পরিবর্তে সেখানে নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ফলে ব্যাংকের শাখা না থাকা সত্ত্বেও মিলছে সেবা। বাড়তি চার্জও লাগছে না। ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারছেন গ্রাহক। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র সাত বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ। এই গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রেখেছেন ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। অথচ ঋণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬৭৪ কোটি টাকা।

সাধারণ ব্যাংকিংয়ের সংগৃহীত আমানতের মধ্যে ৮৫ শতাংশ ঋণ দিতে পারে ব্যাংকগুলো। কিন্তু ব্যাংকগুলোর সেবা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। জেলাশহরগুলোতে কিছুটা ব্যাংকিং সেবা। গ্রামাঞ্চলে শাখাও নেই, সেবাও নেই। সেবাবঞ্চিত মানুষদের সেবা দেওয়ার নামে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে শুধু আমানতই সংগ্রহ করা হচ্ছে কিন্তু ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। দেশের বড় বড় শিল্প গড়ে উঠেছে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে। কিন্তু গ্রামের ঋণ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

এক সেমিনারে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধমে ব্যাংকিং সেবা গ্রামাঞ্চলে গেছে। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতিকে পুনর্গঠন করতে হবে। এখন গ্রামের উদ্যোক্তারা যেন ঋণ পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে এবং অন্তত ৭০ শতাংশ ঋণ গ্রামে দিতে হবে।

জানা যায়, বিশ্বে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ২৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২২টি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেসব ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সেগুলো হলো ডাচ?-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ? ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড, দ্য সিটি, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এবি ব্যাংক, এনআরবি, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মাকেন্টাইল ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।

২০২০ সালের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৫৩৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ১২৩.৫৪ শতাংশ এবং আমানত বেড়েছে ১২৮.৫৫ শতাংশ। ২০১৯ সালের মার্চ শেষে গ্রাহক ছিল ২৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৫ জন এবং জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল তিন হাজার ৭৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজার ২৬০টি এবং আউটলেট সংখ্যা ১১ হাজার ৮৭৫টিতে। মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৬৭৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সকল প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। তবে এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু বা বৈদেশিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877